সুস্থ থাকতে সকালের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। অনেকেই ওজন বাড়ার ভয়ে সকালের নাশতা বাদ দেন, যেটা একেবারেই ঠিক নয়। সকালে নাশতা না করার কারণে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়। অন্যদিকে, অনেকেই সকালে নাশতা করলেও সেটা স্বাস্থ্যকর থাকে না, এটাও একটা সমস্যা। দিনের শুরুতেই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলছেন পুষ্টিবিদ। তবে অনেকেই বুঝতে পারেন না স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সকালে কী খাবেন। এই প্রশ্নের সমাধান দিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। হেলথলাইনের এক প্রতিবেদনে কয়েকটি স্বাস্থ্যকর খাবারের কথা বলা হয়েছে। এই খাবারগুলো তৈরি করাও সহজ এতে সকালে কম সময়ে পুষ্টিকর সমাধান পাবেন।
ডিম: স্বাস্থ্যকর খাবারের কথা বলতে গিয়ে পুষ্টিবিদরা সবার আগে ডিমের কথাই বলেন। ডিমে প্রোটিন, ভিটামিন এবং আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ডিমে প্রয়োজনীয় সব উপাদান আছে আর ডিমের যেকোনো পদ তৈরি করাও সহজ। তাই সকালে খুব কম সময়ে ডিমের যেকোনো পদ খেতে পারেন।
কফি: সকালে কফি পান করতে পারেন। কফিতে থাকা ক্যাফেইন আপনাকে সতেজ রাখবে এবং মনোযোগ বাড়াবে। এছাড়াও এতে পলিফেনল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরিও রইয়েছে। তবে চিনি অবশ্যই বাদ দিতে হবে। গবেষণা থেকে জানা যায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দিনে ৪০০ মিলিগ্রাম কফি খেতে পারেন। তবে গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফিন না খাওয়াই ভালো।
ওটসমিল: ওটস একটি শস্যজাতীয় খাবার। ওটসে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, ম্যাংগানিজ, কপার, ফসফরাস, আয়রন, জিংক, ফলেট, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি১ এবং ভিটামিন বি৬। সকালের নাশটায় ওটসের তৈরি বিভিন্ন খাবার রাখতে পারেন। সারা দিনের এনার্জি পেতে সকালের নাশতায় ওটস রাখতে পারেন। ওটস ওজন কমাতে সাহায্য করে। আপ নি চাইলে ওটসের সঙ্গে বিভিন্ন ফলযুক্ত করেও খেতে পারেন। নিজের সুবিধা মত একটি ওটসমিল তৈরি করে খেয়ে নিন।
চিয়া সিড: চিয়া সিড বা চিয়া বীজ মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিসপানিকা উদ্ভিদের বীজ। ষ্টিগুণের কারণে চিয়া সিডকে সুপার ফুড বলা হয়। এতে রয়েছে কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক অ্যাসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উপকারী। তাই সকালে চিয়াসিড খেতে পারেন।
বেরি জাতীয় ফল: স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, জাম জাতীয় ফলগুলো পুষ্টিকর। বেরি জাতীয় ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস থাকে, যা মানবদেহের কোষকে সুস্থ রাখে এবং সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে। সকালের নাশতায় বেরি জাতীয় ফল রাখতে পারেন। এই ফল অ্যানথোসায়োনেনস উপাদানের জন্য রক্তের ইনসুলিন ভারসাম্য ঠিক রাখে ও রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে। ফাইবার সমৃদ্ধ এই খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য আশঙ্কা থাকে না।
বাদাম: সকালের নাশতায় বাদাম রাখতে পারেন। কিংবা খাবারের সঙ্গে বাদাম যুক্ত করতে পারেন। পুষ্টিবিদরা বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন এতে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। বাদাম হচ্ছে শক্তি, প্রোটিন ও ভালো চর্বির উৎস। তাই খাদ্যতালিকায় নিয়মিত বাদাম রাখা দরকার। অনেক ধরনের বাদাম পাওয়া যায়। এর মধ্যে চিনাবাদাম, আখরোট, কাজু ও পেস্তাবাদাম খেতে পারেন। সুস্থ থাকতে খাবারের সঙ্গে নানাভাবে বাদাম যুক্ত করতে পারেন।
ফল: সকালের নাশতায় ফল রাখুন। কলা, আপেল, কমলা, আঙুর অথবা মৌসুমি ফলমূল দিয়ে সকালের নাশতা করতে পারেন। বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধে ও ওজন কমাতে আঁশজাতীয় খাবার প্রয়োজন। ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি থাকে। চাইলে ফলমূল দিয়ে সালাদ তৈরি করেও খেতে পারেন।
গ্রিন টি: সকালে গ্রিন টি খেলে কফির মতোই কাজ করবে। গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি , বি৫, ডি, ই, সি, ই, এইচ সেলেনিয়াম, ক্রোমিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ ও সামান্য ক্যাফেইন। গ্রিন টির উপকারিতা অনেক। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে।
খুলনা গেজেট/এনএম